স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
অফিস মালিকের নামে চুরির অভিযোগে মামলা করলেন কর্মচারী। তাও আবার অফিস মালিকের নিজের কেনা এসি চুরির মামলা। ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের।
চুরির অভিযোগে আদালতে দায়েরকৃত মামলার আসামি সদর উপজেলার উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের সিন্দুরা গ্রামের বাসিন্দা ও সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি বিশিষ্ট ঠিকাদার আলী আজম। মামলার বাদী হয়েছেন একই ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের বাসিন্দা ও নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শরীফ মাহমুদ।
গত রবিবার (২৭ জুন) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আয়েশা বেগমের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন শরীফ মাহমুদ। পরে আদালত বাদীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের নরসিংসার বাজারে ইউনিয়ন যুবলীগের কার্যালয়। গত ২০২০ ইং সনের ১১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭ টায় ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শরীফ মাহমুদ প্রতিদিনের মতো ঐ দিন কাজ শেষে কার্যালয় বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। পরেরদিন ১২ অক্টোবর বিকেল ৫ টায় কার্যালয় খোলেন শরীফ মাহমুদ। তখন তিনি শাটারের তালা পাননি। শাটার খুলে তিনি দেখেন কার্যালয়ে থাকা ২৮ হাজার টাকা মূল্যের ৪২ ইঞ্চি একটি এলইডি টেলিভিশন, ২৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার ও ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি দেড়টন এসি নেই। পাশাপাশি অফিসের কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নেই। এ ঘটনায় গত ২৭ জুন ২০২১ ইং তারিখে সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোঃ আলী আজমকে প্রধান আসামি করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জন আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে ৭ জনকে। স্বাক্ষীরা হলেন- নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোটহরণ গ্রামের বাসিন্দা রোস্তম ইউনুছ, মোঃ ইসহাক, পয়াগ গ্রামের বাছির আহমেদ, বিলকেন্দুয়াই গ্রামের আলী হোসেন, বড়হরণ গ্রামের সেলিম এলাহী, কালিসীমা গ্রামের সাধন ইসলাম ও জলিল মিয়া।
এ ব্যাপারে মামলার প্রধান আসামি ও সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মোঃ আলী আজম এ প্রতিবেদককে জানান, ২০১৮ ইং সালে জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্বাচন পরিচালনা করতে স্থানীয় মোর্শেদ আলম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে অফিসটি ভাড়া নেওয়া হয়। যা ৩ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া হিসেবে আমার নিজ নামে ব্যক্তিগত কার্যালয় হিসেবে দোকান মালিক মোর্শেদ আলমের সাথে একটি “ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্র” করা হয়। পরে অফিসে আমার নিজ টাকায় ১ এসি, ১ টি টেলিভিশন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টারটি কেনা হয়। অফিসটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শরীফ মাহমুদকে। সে জন্য তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মাসিক কিছু সম্মানীও দিতাম। ২০১৯ ইং সনে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে অফিসটি আমি বন্ধ করে দেয়। অফিসটি বন্ধ করে দেওয়ার পর শরীফ মাহমুদ নিজেই মালামাল গুলো আমার বাসায় দিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতেই এ মিথ্যা মামলাটি করেছেন। তদন্তে এটি প্রমাণ হবে ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, অফিসটি যেখানে আমার নামে ভাড়ার চুক্তিপত্র করা হয়, সেখানে অফিসের মালামাল গুলো শরীফের কিভাবে হয় তা আপনারাই বলুন।
এ ব্যাপারে দোকানের ভিট মালিক মোর্শেদ আলম এ প্রতিবেদককে জানান, সদর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আলী আজম দোকানটি আমার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন। ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম ও ৩ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া দেওয়ার চুক্তিতে সে ভাড়া নেয়। গত ৬/৭ মাস আগে আলী আজম দোকানটি ছেড়ে দেবে বলে আমাকে জানান। পরে তার দেওয়া অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে দোকানটি অন্যত্র ভাড়া দিয়ে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এলেম খাঁ এ প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আলী আজম দোকানটি ভাড়া নিয়ে অফিস করেছিলো। সেখানে ইউনিয়ন যুবলীগ ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বসতো। অফিসের ভেতরের সকল মালামাল আলী আজমের। অফিস ছেড়ে দিয়ে মালামাল গুলো সে নিয়ে যায়। তার নামে যে মামলাটি করা হয়েছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা বানোয়াট। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply